অভিনন্দন পত্র

প্রিয় পাঠকগন,

 সর্বপ্রথমে , আমি আমার পরমপুজ্য পারমার্থিক গুরুদেব ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস পরিব্রাজক আচার্য অষ্টত্তর শ্রী শ্রীমদ্ গৌর গোবিন্দ স্বামী মহারাজকে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করতে চাই ।

         এবং আমি সেই পরমসত্বাকে আমার বিশেষ সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি , যাকে ছাড়া আমরা অধিকাংশই এই ভৌতিক জগতের মধ্যে হারিয়ে যেতাম, যিনি হলেন এই সমগ্র জগতের রক্ষাকর্তা, জগতগুরু কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংস পরিব্রাজক আচার্য অষ্টত্তর শ্রী শ্রীমদ্ এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।
          সর্বশেষে আমি সেই সমস্ত বৈষ্ণব ভক্তদের আমার বিনম্র প্রণতি নিবেদন করি, যাঁরা সুন্দর এবং আন্তরিকভাবে শ্রীল প্রভুপাদকে অনুসরণ করছেন এবং যারা এই সমগ্র জগতে লক্ষ লক্ষ ভাগ্যবান জীবসত্বাদের কাছে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা প্রচার এবং অনুপ্রানিত করে চলেছেন।
            এই সুযোগে আমি  আপনাদের কাছে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করার জন্য বিনম্র অনুরোধ জানাতে চাই,  তপ্ত জীবনম্ হল একটি প্রচার মাধ্যম, যেটি আমাদের পারমার্থিক গুরুদেব শ্রী শ্রীমদ্ গৌর গোবিন্দ স্বামী মহারাজ এবং শ্রীল প্রভুপাদকে উৎসর্গ করা হয়েছে । এটির মাধ্যমে ভক্তরা তাদের কারুনাময় ও প্রেমময় শিক্ষার দ্বারা নিজের ভক্তিজীবন গড়ে তুলতে পারবে। যে শিক্ষা শ্রীগুরুপরম্পরাক্রমে এবং শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ, যাদের কৃপা ও মহিমা ত্রিভুবনে ছড়িয়ে আছে, -এর প্রতি তাঁদের প্রেমভক্তি দ্বারা অবিকৃতভাবে অবতরিত হচ্ছে। 
          পরমেশ্বর ভগবানের বাহ্যিক শক্তি, মায়া শক্তির দুটি স্বরূপ আছে। যার উদ্দেশ্য জীবাত্মার প্রকৃত পরিচয়কে আচ্ছাদিত রাখা। প্রথমটি "প্রক্ষেপাত্মিকা শক্তি" নামে পরিচিত, এটি সেই শক্তি যার দ্বারা মায়া সেই জীবাত্মাকে জড়জগতের বিষয়-সাগরে নিক্ষেপ করে। 
           মায়ার দ্বিতীয় শক্তি "আবরণাত্মিকা শক্তি" নামে পরিচিত, এই শক্তির দ্বারা মায়া জীবের প্রকৃত জ্ঞানকে আচ্ছাদন করে রাখে। এই দুই শক্তির প্রভাবে বদ্ধ জীবের তার প্রকৃত পরিচয়ের- সে হল কৃষ্ণের দাস; সে হল এক আত্মা, কোনো দেহ নয় - বিস্মরণ ঘটে । পরিবর্তে সে মনে করে, “আমার সংলগ্ন  সমস্ত কিছুর স্বামী আমি"। এরূপ মানসিকতার জন্য সে বারংবার বিভিন্ন যোনিতে জন্ম গ্রহণের মাধ্যমে কষ্টভোগ করে এবং বিভিন্ন ব্রহ্মান্ডে ভ্রমণ করতে থাকে। 
এইসমস্ত বদ্ধজীবদের সাহায্য এবং উদ্ধার করার জন্য ভগবান নিজে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তিনি শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় নির্দেশ দিয়েছেন –" শুধুমাত্র আমার প্রতি আত্মসমর্পণ কর, তবেই তুমি মায়া থেকে মুক্তি লাভ করবে,” [ভ.গী.- ৭.১৪]
          কিন্তু তা শ্রবণ এবং পঠনের পরেও, নিজেকে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করার কোনো শক্তি বদ্ধজীবের নেই। শ্রীল ব্যাসদেবের মাধ্যমে ভগবান বৈদিকশাস্ত্রকে প্রকাশিত করেছিলেন, যাতে কোনো বদ্ধজীব তা পাঠ করার মাধ্যমে তার বাস্তবিক অবস্থান সম্বন্ধে অবগত হতে পারে।
        যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, পরমাত্মারূপে প্রত্যেক জীবের হৃদয়ে অবস্থান করছেন এবং সেই বদ্ধ জীবকে তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বারংবার স্মরন করিয়ে দেন তথাপি অনাদিকাল থেকে সেই বদ্ধজীব নিজের প্রকৃত পরিচয় “কৃষ্ণ দাস” তা ভুলে যায় এবং নিজেকে এক দেহ ও নিজ ইন্দ্রিয়ের সেবক রূপে মনে করে। সে পরমাত্মার নির্দেশ বুঝতে অক্ষম । কখনো সে তার মস্তিষ্কের প্ররোচনাকে পরমাত্মার নির্দেশ এবং কখোনো পরমাত্মার নির্দেশকে মস্তিষ্কের প্ররোচনা বলে মনে করে। এইভাবে সে এখন ভৌতিক জগতের গভীর অন্ধকার কূপে আবদ্ধ।
          সুতরাং কে তাকে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারে? কৃষ্ণের ইচ্ছায় এবং যোগমায়ার আয়োজনে-কৃষ্ণের নিজজন, তাঁর অন্তরঙ্গ পার্ষদরা বদ্ধজীবদের উদ্ধার করার জন্য এই ধরাধামে আবির্ভুত হন  ।  তাঁরাই হলেন সাধু-গুরু । তিনি কৃষ্ণের ইচ্ছা অনুসারে এখানে অবতরণ করেন। তাঁরা হলেন আমাদের একমাত্র আশ্রয় এবং সুরক্ষা। এটি শ্রীমদ্ভাগবদ-এ উল্লিখিত আছে। তারা কোনে বদ্ধজীব নয়, এবং তাঁরা কখনো বদ্ধ  ছিলেন না। তাঁরা এই জড় জগতের অংশ নন। তাঁদের আবির্ভূত ও তিরোভাব হন ভগবানের ইচ্ছায়।(শ্রী চৈ.চ.ম.- ৮.৩৯)
         সুতরাং , আমাদের সকল গৈৗড়ীয় বৈষ্ণব আচার্যরা হলেন কৃষ্ণের নিত্যপার্ষদ , যাঁরা এই জড়জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁদেরকে সেবা ও প্রসন্ন করা ব্যাতিত আমাদের মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন - " ছাড়িয়া বৈষ্ণব সেবা নিস্তার পেয়েছো কেবা"। তাই ভগবানের শুদ্ধ ভক্তদের কাছে প্রার্থনা ও সেবা করুন।
         এই উপলক্ষে, আমরা সকলকে স্বাগত জানাই এবং আন্তরিক ও বিনীতভাবে সমস্ত ভক্তদের কাছে অনুরোধ জানাই, আপনারা সকলে সর্বক্ষণ ভক্তি সহকারে শুদ্ধ ভগবত্-ভক্তের কাছে প্রার্থনা ও সেবা করুন এবং আমাদের এই প্রচেষ্টা তপ্তজীবনম- এর সদ্ব্যবহার করুন।
          এই সেবায় অংশগ্রহণকারীদের এবং এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যাদের বিশেষ ভূমিকা আছে, তাদের সকলকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। 

॥ হরে কৃষ্ণ॥

 আপনাদের সেবক এবং শুভাকাঙ্ক্ষী,
 হলধর স্বামী

Share :

Add New Comment

 Your Comment has been sent successfully. Thank you!   Refresh
Error: Please try again